মোহ মেঘের আলাপন - রোমান্টিক বাংলা উপন্যাস । ০৩

 

মোহ মেঘের আলাপন - রোমান্টিক বাংলা উপন্যাস ।  ০৩

মোহ মেঘের আলাপন

লেখকঃ নূরজাহান আক্তার আলো

পর্বঃ ০৩

-''যাচ্ছেন কেন, খাবেন না?"

-''যে আমাকে ঘৃণা করে। তার স্পর্শের খাবার খাওয়া আমার চাহিদা বিরুদ্ধ।"

       -''আপনার এই দম্ভ আমিই চুর্ণ করবই।"

        -''দম্ভ?"

        -''তা নয়তো কী?

        -''ওকে, বেস্ট অফ লাক।"

একথা বলে আদিত্য প্রস্থান করল। মেধা বিরবির করে বকে  খাবারের প্লেট নিয়ে খেতে খেতে বাইরে চলে গেল। খাবে না
তাকে সাধার সময়ও তার নেই। ততক্ষণে আমান তার বাবা 
মায়ের সঙ্গে খাওয়া শুরু করেছে। আদিত্য তার কারণে বসে নি একথা সেও জানে। বড় ভাইয়ের এভাবে এড়িয়ে যাওয়া 
তাকে কষ্ট দেয়, ব্যথিত করে। ভুল করেছে ক্ষমাও চেয়েছে। 
কিন্তু আদিত্য ক্ষমা করে নি আর হয়তো করবেও না। এসব ভাবতে ভাবতেই আমান প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করছিল। তখন মেধা গিয়ে ধপ করে সীমা বেগমের পাশে বসে বলল,

       -''তোমার বড় মহারাজ খাবে না।''

-''এক্ষুণি তো খাবার দিতে বলল। তাহলে খাবে না কেন?এই ছেলের কখন কী হয় কে জানে।"

  -''ঢং বুঝলে মামনি। কত রকমের ঢং পারে তাই দেখাচ্ছে।"

  -''এই তুই আমাকে ছেলেকে এভাবে বলছিস কেন?"

       -''সাধু যে তাই।"

তখন আমান মেধার মাথায় গাট্টা মেরে চোখ পাকালো। তার
ভাইকে নিয়ে এসব কথা সহ্য করবে না সে। মেধা মাথায় হাত বুলিয়ে খাওয়া ছেড়ে শুরু করে দিলো মারামারি। আমানের চুল ধরে টেনে মাদুরে শুইয়ে ফেলেছ। তখন ওদের দু'জনকে ধমকে থামালেন সীমা বেগম। তারপর কিছু ভেবে বললেন,

      -''মেধা একটা কাজ করতে পারবি মা?''

       -''বলো।'

   -''যদি পারিস তোর পছন্দসই স্বর্ণের রিং কিনে দিবো।"

      -''তিন সত্যি?"

     -''হুম তিন সত্যি। "

    -''শুধু বলো কি করতে হবে?"

   -''আদিত্যকে প্রচন্ড বিরক্ত করবি৷ এত বিরক্ত করবি যাতে    তোর অত্যাচারে বাসায় আসতেও ভয় পায়।"

      -''ওমা বলে কী, কিন্তু কেন?"

        -''পারবি কি না বল?"
 
     -''মেধা পারে না এমন কাজ আছে নাকি?"

 -'' তাও ঠিক। আর শোন তোর বাবা জরুরি কাজে বাইরের দেশে যাবেন বলছিল। তোর জন্য যেতে পারছে না।একাজ কর তুই আমার বাসায় চলে আয়। এতে আদিত্যকেও বিরক্ত করাও হবে আর তোর বাবাও চিন্তা মুক্ত হয়ে কাজটা সেরে আসতে পারবে।"

-''বাবা কতদিনের জন্য যাবে? আমাকে তো কিছু বলে নি।"

    -''অফিসের কাজ বুঝিসই তো।"

      -''হুম।"

   -''থাকবি তো আমার কাছে নাকি বাবার লেজ ধরবি?"

    -'' না থাকব। "

তারপর গল্প করতে করতে খেয়ে মেধা বিকেলের দিকে তার বাসায় ফিরে গেল। আদিত্য ওর রুম থেকে বের হয় নি আর দেখাও হয় নি। তাতে মেধা খুশিই হয়েছে। ওই লোকের সঙ্গে 
দেখা হওয়া মানেই ঝগড়া আর ঝগড়া। সে ঝগড়ুটে রাজা। 
ততক্ষণে রেজাউল হককে সীমা ফোন করে জানিয়ে দিলেন কাজ হয়ে গেছে। মেধাকে নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।
 তাছাড়া দূরে দূরে থাকলে দূরত্ব বাড়ে। কাছে থাকলে বাড়ে মায়া।এখন মায়ার টানে যদি আঁটকা পড়ে দু'জন তাতেই তো
খেলা। মেধার রাজি হওয়ার কথা শুনে রেজাউল হক স্বত্বির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। সত্যি সত্যিই বাইরে যাওয়া খুব প্রয়োজন শুধু মেধার জন্য পারছিলেন না। প্রায় সময়ই দেশের বাইরে গেলে মেধাকেও সঙ্গে নিয়ে যান তিনি। পরে উনি কাজে ডুবে থাকেন আর মেয়েটা বোরিং হয়ে মন ভার করে বসে থাকে। এরচেয়ে সীমার কাছে থাকলেই ভালো থাকবে আর উনিও নিঃচিন্তে থাকবে। 

এদিকে মাথাভর্তি দুষ্টু বুদ্ধি আমদানি করে কাপড়ের ব্যাগ'ও গুছিয়ে নিলো মেধা। তারপর পছন্দসই উপন্যাসের বই নিয়ে শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগল। আর উপন্যাসটাও ছিলো 'কাজিন রিলেটেড গল্প '। প্রথমের দিকে পড়াতে মন না বসলেও পরে একটু একটু করে ডুবে যেতে লাগল উপন্যাসের রসে। সমস্ত 
ধ্যান জ্ঞান দিয়ে সে পড়তে লাগল উপন্যাসের বইটি। ঠোঁটের কোণে ফুঁটে উঠল দুষ্টু হাসি। অনেক সময় নিয়েই উপন্যাসটা
পড়ে শেষ করল মেধা। তারপর মিটিমিটি হেসে মনে মনেই বলল,

-''তোমাকে মারতে বিষ প্রয়োগ করব না অপ্রিয় মানুষ। শুধু
প্রেম তৃষ্ণায় কাতর করে তোমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে ছড়িয়ে দিবো প্রেমের জীবাণু। যেটার যন্ত্রণায় ছটফটিয়ে মর/বে সর্বক্ষণ।"

একথা বলে মেধা চোখজোড়া বন্ধ করে পুনরায় বলল,

-''প্রয়োজনে তোমাকে পুড়াতে গিয়ে আমিও পুড়বো। তবুও 
এর শেষ দেখেই ছাড়ব, মিলিয়ে নিও।"

এসব ভাবতে ভাবতে সে ধীরে ধীরে তলিয়ে গেল ঘুমরাজ্যে।
ঘড়িতে তখন রাত দু'টো। উপন্যাসের বই পড়ার তালে রাতে খাবার খেতেও যায় নি সে। পরে ওর বাবা এসে খাইয়ে দিয়ে গেছেন। আর মিটিমিটি হেসেছেন মেয়ের এমন কান্ড দেখে।
তারপর প্রায় দুইদিন পর রেজাউল হক মেধাকে আদিত্যদের
বাসায় রেখে দেশের বাইরে চলে গেলেন। ফিরবেন পনেরো দিন পর। মেধা আদিত্যের রুমের পাশের রুমটাতেই থাকবে।
তাই এসে মনমতো করে রুম গুছিয়ে ফেলেছে। জামাকাপড়
তুলে রেখেছে ওয়ার্ডড্রোপে। ড্রেসিংটেবিল সাজিয়ে ফেলেছে মেয়েলি নানান রকমের জিনিসপত্রে। তবে এসে অবধি মেধা আদিত্যের দেখা পায় নি সে। মহারাজ অফিস থেকেই ফিরে নি এখনো। যদিও ফেরার সময়ও হয়ে গেছে। সে আইসক্রিম 
খেতে খেতে ঘড়িতে দৃষ্টি বুলিয়ে কল দিলো আদিত্যকে।তবে
তিনবারের বেলায়ও আদিত্য কল রিসিভ করল না। সে ব্যস্ত হিসাব মিলাতে। প্রায় এক ঘন্টা পরে সে হাতের কাজ সেরে
ফোন হাতে নিয়ে দেখে মেধা কল করেছে। যেটা ছিলো ওর জন্য অপ্রত্যাশিত শক। মেধা এই অবধি কখনো তাকে আগ বাড়িয়ে কল করে নি তবে আজ কেন? কিছু হলো ভেবে সে
কল ব্যাক করল। ঠিক দশ বারের বেলাতে মেধা কল রিসিভ করে হ্যালো হ্যালো করছে। সে আদিত্যকে দিয়েছিল নয়বার কল। তাই নয়ে নয়ে কাটাকুটি করে দশ বারের বেলাতে কল রিসিভ করেছে। আর এতক্ষণ বসে বসে দেখেছে আর ঠোঁট চেপে হেসেছে। আদিত্য ফোনটা কানে ধরে চুপ করে আছে। সেদিনের পর মেধার সঙ্গে কথায় বলে নি সে। আজও আগ বাড়িয়ে কিছু বলবে না তাই মেধায় আহ্লাদভরা কন্ঠে বলল,

     -''আদিত্য ভাইয়া ফিরতে কি আরো লেট হবে তোমার?"

আদিত্যের ভ্রঁ কুঁচকে গেল। এই মেয়ে আপনি থেকে সরাসরি তুমি সম্বোধন করছে, আশ্চর্য! নিশ্চয়ই মাথায় কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে এর। নয়তো অসময়ে কল দেওয়ার কথা নয়। এছাড়া মিষ্টি মধুর কথাও যুক্ত করেছে তাও বলছে ওরই সঙ্গে। যেটা প্রায় সচারাচর ঘটছে না। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকে তো নয়ই। তারমানে ওর ধারনায় ঠিক। এসব ভেবে আদিত্য চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পূর্বের ন্যায় গুরুগম্ভীর স্বরে বলল,

            -'' কেন?"

-''আসার সময় আমার জন্য চারটা আইসক্রিম এনো। আমি 
তোমাদের বাসাতেই আছি। আর তোমার জন্য কিছু বানিয়ে রাখবো, খাবে?" 

        -''না, ধন্যবাদ। "

-''শরীর ঠিক আছে তো তোমার? তা দুপুরে খেয়েছিলে তো?"

     -''যা বলার ঝেড়ে কাশো অহেতুক কাহিনি করো না।"

-''এভাবে কেন বলছো আদিত্য ভাই? তোমার খোঁজ নেওয়া আমার দায়িত্ব। তাও যে সে দায়িত্ব নয় গুরু দায়িত্ব। "

-'' এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো।  আসছে গুরু দায়িত্ব দেখাতে, ফাজিল কোথাকার।"

একথা বলে আদিত্যই কল কেটে দিলো। তারও বুঝতে বাকি নেই মেধা তাকে রাগিয়ে মজা নিচ্ছে। ওদিকে মেধাও হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে পড়েছে। পাশে বসে সীমা বেগমও মৃদু স্বরে হাসছেন। এর দেড় ঘন্টা পরে আদিত্য বাসায় ফিরলো। হাতে শপিং ব্যাগ। সে সেটা সেন্টার টেবিলে রেখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে আদিত্যের মা বললেন,

         -''ব্যাগে কি আদিত্য? "

          -''আইসক্রিম।"

   -''তুই তো আমার জন্য আইসক্রিম আনিস না তবে আজ আনলি যে?"

 -'' তোমার ঠান্ডার সমস্যা তাই আগে আনতাম না, আজও আনি নি।"

  -''আমার জন্য নাহলে কার জন্য এনেছিস? মেধাও তো নেই, তবে?"

-''নেই মানে? আঙ্কেল না আসা অবধি ওর না এখানে থাকার কথা?"

-''কিছুক্ষণ আগে বায়না ধরল এখানে নাকি ভালো লাগছে 
না মামার বাসায় যাবে। তাই আমান গিয়ে রেখে আসল।"

     -"তুমি যেতে দিলে কেন?"

      -''সে কারো কথা শুনে?"

আদিত্য আর কথা না বাড়িয়ে ঘুরে হাঁটা ধরল।মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আইসক্রিম আনতে বলে সেই চলে গেছে। মানে হয় এসবের? তারপর আদিত্য রুমে গিয়ে শার্ট খুলে ঘুরতেই কেউ একজন শরবত ভর্তি গ্লাস এগিয়ে দিলো তার দিকে।
সামনে দন্ডায়মান মানুষটার স্নিগ্ধ মুখে মিষ্টি হাসি। ডাগর ডাগর নেত্রে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। ফোলা ফোলা ফর্সা গাল জোড়ায় লাজুকতার ছাপ। অথচ লাজুকলতা কারণই ঘটে নি। তখন আদিত্য গ্লাস নিয়ে স্বাভাবিকভাবে শরবতটুকু খেয়ে গ্লাসটা পাশেই রেখে দিলো। মুখে একটা কথাও বলল না। মেধা তখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে আদিত্য পরণের শার্টটাও খুলে ফেললো। তখন মেধা চট করে বলে ফেললো,

-''আমি কি আপনার বউ লাগি যে নির্লজ্জের মতো আমার সামনে শার্ট খুলে ফেললেন?"

ওর কথা শুনে আদিত্য তোয়ালে নিয়ে পিছু না ফিরে বলল,

      -''হয়ে যাও, হতে তো আর বারণ করি নি।"

-"জীবনেও না। পৃথিবীতে ছেলে হিসেবে যদি একমাত্র আপনিই থাকেন তবুও আমি আপনাকে বিয়ে করব না।"

-''পৃথিবীতে কোটি কোটি মেয়ে থাকতেও বিয়ে যদি করতেই হয় তবে তোমাকেই করবো, পারলে ঠেকাও।"

  
একথা বলে আদিত্য ওয়াশরুমে চলে গেল। আর মেধা রাগে দুঃখে গজগজ করতে করতে আদিত্যের সব জামা কাপড় এলোমেলো করে বেরিয়ে গেল। আর আদিত্য শাওয়ারের নিচে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি উঁকিও দিচ্ছে। তখন তার হুমায়ুন আহমেদ একটা কথা স্মরণ হলো 'মেয়েরা গোছানো মানুষ পছন্দ করে না। পছন্দ করে অগোছালো মানুষ।' তাই এবার সে অগোছালো মানুষই হবে। যাকে নব্যরুপে গুছিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে মেধার। সেটা হোক তার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। 

(গল্পটি যে যখন পড়বেন রেসপন্স করবেন প্লিজ। কারণ আপনাদের রেসপন্সই আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আমার গল্পের অপেক্ষা আছেন আপনারা।) 

To be continue......!!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url