ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকার ডেঙ্গু রোগের ওষুধ শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সমূহ ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ২০২১ ডেঙ্গু হলে করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর কী ও কিভাবে ছড়ায়?
ডেঙ্গু জ্বর কখন ও কাদের বেশি হয়:
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ :
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর :
এই অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল । এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয় তা হল:-
শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়, যেমন চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি ।
এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে । অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনীতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে ।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম:
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম । ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয় । এর লক্ষণ হল:-
১। রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া ।
২। নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয় ।
৩। শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠাণ্ডা হয়ে যায় ।
৪। প্রস্রাব কমে যায় ।
৫। হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয় ।
জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ ।
তিনি বলছেন, ''ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন । জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে । তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে ।''
বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ''জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে । তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয় । একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো । পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন ।''
ডেঙ্গু হলে কী খাবেন?
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে । যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে । এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে ।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ''ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে । স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে ।''
চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম । কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না । ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে ।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যে সব ওষুধ বারণ:
>> ব্যথানাশক ওষুধ (এন.এস.এ.আই.ডি গ্রুপ যেমন, ডাইক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপারক্সেন, মেফেন)
>> এসপিরিন/ক্রোপিডোপ্রেল (এন্টি প্লাটিলেট গ্রুপ) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
>> ওয়ারফারিন (এন্টিকোয়াগুলেন্ট) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
>> এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে)
কখন ডাক্তার দেখাবেন :
ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই । তবে এই জ্বর সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় । তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট । তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াই ভালো-
- শরীরের যে কোন অংশ থেকে রক্তপাত হলে ।
- প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে ।
- শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে ।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে ।
- জন্ডিস দেখা দিলে ।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে ।
- প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে ।
ডেঙ্গু হলে কী কী পরীক্ষা করা উচিত?
আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর হলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার নাই, এতে অযথা অর্থের অপচয় হয় ।
জ্বরের ৪-৫ দিন পরে সিবিসি এবং প্লাটিলেট করাই যথেষ্ট । এর আগে করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে এবং অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন । প্লাটিলেট কাউন্ট ১ লক্ষের কম হলে, ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ।
ডেঙ্গু এন্টিবডির পরীক্ষা ৫ বা ৬ দিনের পর করা যেতে পারে । এই পরীক্ষা রোগ সনাক্তকরণে সাহায্য করলেও রোগের চিকিৎসায় এর কোন ভূমিকা নেই । এই পরীক্ষা না করলেও কোন সমস্যা নাই, এতে শুধু শুধু অর্থের অপচয় হয় ।
প্রয়োজনে ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষাসমূহ যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যাবে ।
এছাড়াও প্রয়োজনে পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম, বুকের এক্সরে ইত্যাদি করা যাবে ।
চিকিৎসক যদি মনে করেন যে রোগী ডিআইসি জাতীয় জটিলতায় আক্রান্ত, সেক্ষেত্রে প্রোথ্রোম্বিন টাইম, এপিটিটি, ডি-ডাইমার ইত্যাদি পরীক্ষা করতে পারেন ।
ডেঙ্গু কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়??
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না । সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে । এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না ।