এক নজর দেখার অসুখ - রোমান্টিক বাংলা গল্প ও উপন্যাস

এক নজর দেখার অসুখ - রোমান্টিক বাংলা গল্প ও উপন্যাস
এক নজর দেখার অসুখ - রোমান্টিক বাংলা গল্প ও উপন্যাস



"জুন মাসের ছয় তারিখ শানু'র জন্মদিন ।" 


ডায়রীর পাতায় এভাবেই তারিখটি লিখে রেখেছিলাম । অথচ আমার মনে ছিল না তারিখটি । আজকাল বড্ড মন ভোলা হয়ে গেছি । কাল  অন্তত তোমাকে একনজর দেখতে হবে । হোক চুপি চুপি। নয়তো আজ রাতের অন্ধকারে চোরের মতো সিধ কেটে ঢুকে তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা একবার দেখে আসতে হবে। কত দিন দেখা হয় না মায়া ভরা মুখটি। কিন্তু তুমি এখন ইট পাথরে ঘেরা ঘরে থাকো। কোন চোরের এমন সাধ্য হয় বলো সিধ কাটার! তার চেয়ে ভালো কাল দিনে একবার চুপি চুপি দেখার চেষ্টা করব। বাড়ির পাশে পাকা রাস্তা। রাস্তার পাশেই বাঁশ ঝাড়। সেই বাঁশ ঝাড়ে সন্ধ্যার পর বক এসে জড়ো হয়। তাদের বাসা এই বাঁশ ঝাড়ে। আমি গিয়েছিলাম তো আরো কয়েকবার। না গেলে কেমন করে জানি বলো তো? তোমাদের নলকূপে যেতে হয় উঠান পেরিয়ে। তুমি হয়তো পানি আনতে গেলে কোনো একবার। আমি সেই ফাঁকে তোমার মায়া ভরা মুখটা দেখে নিলাম।

রাস্তার পাশেই রান্না ঘর। তোমার জন্মদিন উপলক্ষে যদি বাড়িতে বড়ো এক ইলিশ মাছ আনা হয়। তুমি ফুটন্ত তেলে সেই ইলিশ ভাজার সময় রাস্তা পেরিয়ে ঘ্রাণ চলে আসবে। আমি যদি ছুটে যাই, তোমার হাতের রান্না একবেলা খাব বলে। পৃথিবীর নিয়ম ভেঙ্গে তুমি কি বিছানায় বসিয়ে ভাত বেড়ে দিবে? তোমার স্বামী বাড়ি ফিরে দেখবে তুমি তালপাখা দিয়ে বাতাস করছো আমাকে। একটু সময়ের জন্য ভুলেই গিয়েছিলে তোমার শ্বশুর বাড়িতে পাখা চলে, এসি চলে। তুমি হাসি মুখে বললে, "এই দেখো না কে এসেছে? আমার পুরোনো প্রেমিক। আমাকে এক সময় অনেক ভালোবাসত জানো!"

পৃথিবীর কোনো স্বামী এমনটা মেনে নিবে না। পৃথিবীর সংবিধান বহির্ভূত এই কর্ম, এই কথামালা। আমিই বা যাব কেন ইলিশ ভাজা খেতে? আমি তো তোমাকে একনজর দেখেই চলে আসব।


এবার অনেকদিন হয়ে গেল বাবার বাড়িতে আসো না। তাই আমারো অনেকদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া হয় না। যতদিন বাবার বাড়িতে থাকো, সকালে পালিয়ে গিয়ে রাতে ফিরে আসি। একই এলাকায় বাড়ি যে। প্রতিবেশী মানুষজন বড্ড জ্বালায় জানো? মুচকি হেসে উপহাসের স্বরে বলেই বসে, "শাওন তোর শানু এসেছে জামাই নিয়ে। পরেরবার বাচ্চা নিয়ে আসবে কোলে করে।" 

আচ্ছা এমন কেন হয় না! তুমি আসলে বাবার বাড়িতে। এলাকার অনেকে জড়ো হয়ে আমাকে এক প্রকার কাঁধে তুলে নিয়ে তোমাদের বাড়ি গেল। তোমার বাবা মা'কে বলল, "শাওন এসেছে শানুকে দেখতে। একটু দেখেই চলে যাবে।" 

তোমার বাবা মা আমাকে বসতে দিলো। তুমি সামনে এলে। আমি তোমার দিকে এক দৃষ্টিতে অনেক্ষণ চেয়ে রইলাম। তারপর হাসিমুখে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। এটাও পৃথিবীর সংবিধানে নেই, তাই না? 

কিন্তু রোজ রাতে নিয়ম করে চোখের পর্দা ফেলার সাথে সাথে উঁকি দেও। আমি বুঝতে পারি আমার বুজে থাকা চোখে তুমি এসেছো। আমি চোখ খুলি, তোমাকে একনজর দেখার জন্য। চোখ খুলে দেখি তুমি নেই। 'একজনম দেখব বলে অনুমতি চেয়েছিলাম। অথচ দেখো, একনজরও দেখি না তোমায়।'


তোমার আঠারোতম জন্মদিনে আমি রাত জেগে মশার কামড় খেয়েছিলাম। তোমাদের বাড়ির পেছনটা কেমন নোংরা করে রাখতে মনে নেই তোমার? তোমাদের সারা উঠান ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ফেলতে বাড়ির পেছনটায়। সেজন্যই এতো মশা জন্মেছিল। আমি অপেক্ষা করছিলাম পাঁচ-ই জুলাই রাতে। বারোটা বাজলেই তোমার জন্মদিন উইশ করব। সময় যেন কাটছেই না। এদিকে মনের ভিতর ভয়, কেউ দেখলে চোর ভেবে বসবে না তো? 

বারোটা বাজতে দুই মিনিট বাকি। আমি জানতাম তোমাদের এই রুমটাতে তুমি আর তোমার ছোটো ভাই থাকো। আমি জানালায় একের পর এক টোকা দিয়ে যাচ্ছি। তুমি হয়তো ভয় পাচ্ছিলে। এতো রাতে জানালায় ভূত এলো না-কি? আমি ফিসফিস করে ডাকলাম তোমায়। কয়েকবার ডাকার পর জানালা খুলে দেখলে আমার হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। সেই আলোতে তোমার মায়াভরা মুখটি কতো সুন্দর লাগছিল। আমি বললাম, "ফুঁ দিয়ে মোমের আগুনটা নিভিয়ে দাও।"

তুমি ফুঁ দিলে। আমি বলে উঠলাম, "হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ"। তুমি অবাক হয়ে গেলে। এমন পাগলামি কেউ করে? 'ওভালটিন' কেক নিয়ে গিয়েছিলাম। চাকু নিয়ে যাইনি। তাই কেক কাটা হয়নি। হাত দিয়ে তুমি আমাকে, আমি তোমাকে কেক খাইয়ে দিলাম। তুমি আমার চুল টেনে বললে, "পাগল"। 

আজকাল নিজেকে পাগল মনে হয় জানো! সেই যে তোমার জন্মদিন পালন হলো। সেটাই শেষ, গত কয়েক বছর ধরে আর পারিনি তোমাকে কেক খাইয়ে দিতে। মোমের আলোয় কিংবা দিনের প্রহরে পারিনি তোমাকে ভালো করে এক নজর দেখতে। অথচ তোমাকে এক জনম দেখার অনুমতি দিয়েছিলে। 


তোমার বিয়ের সময় রেজিস্ট্রি খাতায় সাইন করার সময় না-কি আমার জন্য কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলেছিলে। তোমার বান্ধবী বলেছিল পরে একদিন। আমার প্রতি যে কয়েক ফোটা চোখের পানি ফেলেছো, এজন্যও তো এক জনম তোমাকে ভালোবাসা যাবে। ভালোবাসতে আবার অত বড়ো অজুহাত লাগে না-কি?

তোমাকে দেখতে চাওয়ায় অজুহাত লাগত। সেবার হঠাৎ বন্যায় পানি উঠল। ততো বেশি না হলেও বর্ষার পানিতে মাছ ধরার জন্য উপযোগী। আমি রাতের বেলা লাইট মেরে মাছ ধরার অজুহাতে তোমাকে দেখতে যেতাম। তুমি জানালা ঈষৎ ফাঁক করে রাখতে। লাইটের আলো পড়লেই জানালা খুলে উঁকি দিতে। আচ্ছা যদি এমন হয়। তোমার স্বামীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছো। আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। এক কালের প্রেমিক ছিলাম তো। দেখার ইচ্ছে জাগতেই পারে। তোমাদের জানালায় টোকা দিতেই তুমি তোমার স্বামীকে বললে, "শাওন এসেছে। আমাকে একটু দেখেই চলে যাবে।" তুমি জানালা খুললে। আমি তোমার মায়াভরা মুখটা দেখে নিলাম। 

উহু,  এমনটা আবার হয় না-কি? তার চেয়ে বরং আমি নির্লজ্জ হবো। শত অপমান গায়ে মাখব। একদম সাবান মাখার মতো করে অপমান মেখে নেব। তুমি যখন বাবার বাড়ি আসবে। বড়ো রাস্তা থেকে তোমাদের বাড়ি অবধি পথটিতে তোমাকে দেখে নেব। কে কী বলল এতো কিছু দিয়ে কী হবে? তোমাকে দেখার চেয়ে বেশি আর কিছু হতে পারে? 


থাক ওসব কথা। পৃথিবী ছেড়েছো কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। তোমার স্বামী নতুন করে বিয়ে করেছে শুনলাম। আমি বউ দেখিনি। তোমার চেয়ে সুন্দর কি-না, জানি না।  আমার হ্যালুসিনেশন এর ব্যাপারটা শেষ হয়নি এখনো। ডাক্তার বলেছিল স্থান পরিবর্তন করতে, করেছি। তাতে হয়নি কিছুই। আমি জানি আজ রাতে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তুমি আবারও আসবে। আজ মোমবাতি আনিনি জ্বালাতে, সিগারেট জ্বালাবো বলে। কেক আনিনি মিষ্টি মুখ করতে, নিকোটিনের তিক্ততা ঢের ভালো। তোমাকে এক জনম দেখার অনুমতি পেয়েও এখন এক নজর দেখার অসুখে ভুগছি আমি। আমি তোমার জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে অপেক্ষা করছি। এক নজর দেখার অসুখ ভালো করতে তুমি এসো । তোমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা । 

"শুভ জন্মদিন"


"এক নজর দেখার অসুখ"

লেখক - ওমর ফারুক শ্রাবণ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url