চিকেন পক্স হলে কি করবেন ও দ্রুত সারাতে যা করবেন ও যা খাবেন?

সাধারণত শীতের শেষে এবং গরমের শুরুতে যাতনাময় একটি রোগ চিকেন পক্স বা জলবসন্ত । বসন্তের শুরুতে জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব বাড়ে । তাই এই সময়ে আমাদের সকলকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে । আর চিকেন পক্স বা জলবসন্ত যদি হয়েই যায় তবে নিতে হবে বাড়তি যত্ন ।  আগে এই রোগে অনেক মানুষের মৃত্যু হতো । ছোঁয়াচে এ রোগ সারা বছর দেখা গেলেও এ সময়েই এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি । সাধারণত ভাইরাস সংক্রমণের ১০ থেকে ২১ দিন পর শরীরে চিকেন পক্সের লক্ষণ দেখা দেয় ।  যে কোনো বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে । 

চিকেন পক্সের কারণে শরীরে ছোট ছোট লালচে তরলযুক্ত ফোঁসকা ওঠে  এর সঙ্গে দেখা দেয় মাথাব্যথা আর জ্বর । রোগীর শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে । চিকেন পক্সের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এর লালচে ফোঁসকার সঙ্গে মারাত্মক চুলকানি । 

ফলে ফোঁসকা ফেটে গেলে তা থেকে আরও বেশি মাত্রায় ফুসকুড়ির মতো উঠতে শুরু করে । তবে সতর্ক থাকলে তেমন কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ঘরোয়া যত্নেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন । 

চিকেন পক্স বা জলবসন্ত
চিকেন পক্স বা জলবসন্ত 



চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হলে কী করবেন??


১। এ রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে । এ সময় রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত । তাই গোসল করা জরুরি । তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে কখনো গোসল করবেন না । কুসুম গরম পানিতে গোসল করা ভালো । থালাবাসন, কাপড়চোপড় বা রোগী স্পর্শ করে এমন সবই অন্যদের থেকে পৃথক করে দিতে হবে। 

 ২। নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার মিলবে । নিমের অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে ।

৩। এসময় বারবার জ্বর হতে পারে । তাই প্রাপ্তবয়স্করা প্যারাসিটামল খেতে পারেন । তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকরে পরামর্শ নিন ।

৪। প্রতিদিন দু’বেলা করে জামা-কাপড় বদলানো উচিত । তাতে একটু হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে । সুতি ছাড়া অন্য কাপড়ের পোশাক পরবেন না, কারণ তাতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে ।

৫।  চিকেন পক্সের ক্ষত খোঁটা যাবে না। পক্সে চুলকানি হলে কখনো নখ লাগাবেন না । খুঁটলে স্থায়ীভাবে দাগ বসে যাবে আবার তা থেকে সংক্রমণও ছড়াতে পারে । তাই শিশুদের শরীরে পক্স হলে তাদের নখ ছোট করে কেটে দিন । এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ছয় মাসের মধ্যে দাগ এমনিতেই চলে যায়। 

 ৬। চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগান, আরাম পাবেন । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ খান ও পক্সের ওপর অ্যান্টিবায়োটিক মলমও লাগাতে পারেন ।

৭। ঐসব খাবার খাবেন না যা থেকে রোগীর পূর্ব থেকে শরীরে চুলকানি বা  অ্যালার্জি হইতো ।

৮। চিকেন পক্স হলে নিয়ম মেনে চলাটা খুব জরুরি । নিয়ম মেনে চললে ১০-১৫ দিনেই পক্স ভালো হয়ে যায় ।

৯।  বাইরে বের হতে দেয়া যাবে না । এতে বাইরের বাতাসে পক্স শুকাতে দেরি হতে পারে ।

১০। চিকেন পক্সে সাধারণত বিশেষ কোনো ধরনের ওষুধ প্রয়োজন হয় না। তবে চিকেন পক্স হলে শরীর খুব চুলকায় সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

১১। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া সব পক্স বের হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হোমিও কিংবা ইউনানি জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে পারেন ।

১২।  চিকেন পক্স হলে সেপসিস, এনকেফালাইটিস, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে । তাই এসবের চিকিৎসাও করানো প্রয়োজন ।

১৩। পক্স হওয়ার ৫-৬ দিন পর থেকে নিমপাতা ও হলুদ একসঙ্গে বেটে পুরো শরীরে মেখে ৪-৫ দিন গোসল করাতে হবে। এ ছাড়াও কিছুদিন পানিতে নিমপাতা সেদ্ধ করে গোসল করিয়ে দিন ।

১৪।  চিকেন পক্সের দাগ দূর করতে বিশেষ ধরনের লোশন পাওয়া যায় । এগুলো লাগাতে পারেন । এ ছাড়া কচি ডাবের পানি দিয়ে শরীর, মুখ ধোয়ালেও দাগ দূর হয় ।

১৫। র্যা শ ঝরা শুরু করলে এগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করুন। খোসা এমনিতেই না উঠলে নখ দিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। এতে শরীরে দাগ হয়ে যেতে পারে।


চিকেন পক্স হলে যেসব খাবার খাবেন:


১। জল খাওয়া বৃদ্ধি: চিকেনপক্সের সময় ডিহাইড্রেশন হয় । তাই প্রচুর জল খাওয়ার চেষ্টা করুন । জল যেন ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খান ।

২। ফাস্ট ডায়েট: এই খাবারের মধ্যে রয়েছে কলা, চাল, আপেল এবং টোস্ট ।

৩। ফলের পরিমাণ বাড়ান: চিকেন পক্সের সময় বেশি করে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন । আঙুর, কলা খেতে পারেন। এই ফলগুলি এমনি খেতে ভাল না লাগলে, মিল্কশেক এবং জ্যুস আকারে খেতে পারেন ।

৪। ডাবের জল: এতে শূন্য ক্যালোরি সহ অত্যাবশ্যক খনিজ এবং ভিটামিন রয়েছে । যা, আপনার শরীরে শীতল প্রভাব সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে ।

৫। সেদ্ধ সবজি: সেদ্ধ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন যাতে রান্নায় তেল  না লাগে । গাজর, মিষ্টি আলু, আলু এবং বাঁধাকপি খেতে পারেন ।

৬।  দই: এটি ত্বক নিরাময়ে খুবই কার্যকরী । এতে ক্যালসিয়াম এবং প্রোবায়োটিকও রয়েছে । তাই দই খাওয়ার চেষ্টা করুন ।

৭।  অ্যান্টিভাইরাল: দই, ডাব, অ্যাপ্রিকট, চেরি, অ্যাভোকাডো, পেঁপে, আপেল, নাশপাতি, ডুমুর এবং আনারস ইত্যাদি খান ।

৮। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: কমলা, মাল্টা, ব্রকলি, পেঁপে, কিউই এবং স্ট্রবেরি ।

৯। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিম্যালারিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল সমৃদ্ধ নিম পাতা চিকেন পক্স নিরাময় করে। নিম পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায় ।


চিকেন পক্স হলে যেসব খাবার একদমই খাবেন না :


১। চর্বি ফ্যাট জাতীয় খাবার- মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকেল বা চকোলেট জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে ।

২। অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার- শরীর সুস্থ রাখতে চিকিত্সকরা অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার খেতে বারণ করেন । বসন্ত হলে মুখের ভিতরে ছোট ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাতে ঝাল লাগলে প্রদাহ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে । তাই তেল-ঝাল-মশলা বাদ রাখুন ।

৩। বেশি ড্রাই ফ্রুট- আখরোট, চিনাবাদাম, কিসমিশের মতো খাবারে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশ বিস্তার করে । এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভাল হলেও বসন্তের সময় তা একেবারেই খাবেন না ।



চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে?

উত্তরঃ এ রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে । এ সময় রোগীর শরীর ঠান্ডা রাখা উচিত । তাই গোসল করা জরুরি । তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে কখনো গোসল করবেন না । কুসুম গরম পানিতে গোসল করা ভালো । থালাবাসন, কাপড়চোপড় বা রোগী স্পর্শ করে এমন সবই অন্যদের থেকে পৃথক করে দিতে হবে। নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার মিলবে । নিমের অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে ।


চিকেন পক্স কতদিন থাকে?

উত্তরঃ চিকেন পক্স বা জলবসন্ত হলে নিয়ম মেনে চলাটা খুব জরুরি। নিয়ম মেনে চললে ১০-১৫ দিনেই পক্স ভালো হয়ে যায় ।


চিকেন পক্স এর সময় কি খাবার খাবেন?

উত্তরঃ এ সময় রোগীকে মাছ-মাংস, ডিম-দুধ সবই খেতে দিবে । পুষ্টিকর খাবার খেলে রোগ আরোগ্য সহজ হবে । চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ এবং যাতে অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ না ঘটে সেজন্য অ্যান্টিস্যাপ্টিক দেয়া যেতে পারে । জ্বর, গা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল এবং সারা শরীরে লোপিও ক্যালাসিন লোশন লাগানো যায়।





পরিশেষে, আমিও হঠাৎ আপনার মতোই একদিন এই অতি যতনাময় এর রোগটির শিকার হয়েছিলাম । এই রোগের প্রথম ২/৩ এতোটায় খারাপ আর শরীর ব্যথা করতো আপনাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না । ধীরে ধীরে নিজেকে বিষন্নতায় ঘিরে ধরে যাহা এই রোগের জন্য বড় কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে । সুতরাং আপনার বা আপনার কোন আপনজনের এই রোগ দেখা দিলে তার সাথে মন খুলে কথা বললেন আর তার মাঝে সাহস যোগাবেন যাতে তিনি যেন ভেঙ্গে না পড়েন এবং বোঝান আপনারা তার সাথে রয়েছেন সবসময় ।


 যদি পারেন দিনে ২/৩ বার এক চামচ মধুর সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
 তাছাড়া দিনে ২/৩ বার কাঁচা নিম পাতার রস খেলেও উপকার পাবেন ইনশাল্লাহ । 

মধু ও গোলমরিচ



কারণ এই পদ্ধতিটি আমি নিজে অনুসরণ করে আল্লাহ তাআলার রহমতে ৭ দিনেই চিকেন পক্স থেকে পরিতাণ পেয়েছি ।

 তাছাড়া এসময় শরীরে প্রচুর ব্যথা ও জ্বর থাকে এর থেকে মুক্তি পেতে ডীপলেড ফার্মকো লিমিটেডের "ফিবরিন" দিনে ৩ বার (১+১+১) খেতে পারেন । ঔষুধটি যেকোন হোমিও বা ইউনানী ঔষুধ বিক্রেতার দোকানে পেয়ে যাবেন ।

ফিবরিন Febrine
জ্বর, মৌসুমী জ্বর, অজস্র, তীব্র জ্বর ও ব্যথার জন্য সহায়ক।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url